সোমবার, ১৩ আগস্ট, ২০১৮

ফিতরাহ ও আল্লাহ অস্তিত্ব

                                                                "ফিতরাহ ও আল্লাহ অস্তিত্ব"



আল্লাহ তা'য়ালা আমাদের সৃষ্টি করেছেন।তাই তার অস্তিত্বের বিষয় আমরা বুঝতে পেরেছে যখন আমরা সম্পূর্ণ অস্তিত্ব লাভ করেছ।আসলে প্রতিটি শিশুই জন্মগ্রহণ করে থাকে এই বিশ্বাস নিয়ে যে এই মহাবিশ্বের একজন সৃষ্টিকর্তা আছে।
মহানবি মুহাম্মাদ(সা)বলেছেনঃ
" প্রতিটি নবজাতকই জন্মলাভ করে ফিতরাতের উপর। এরপর তা মা-বাপ তাকে ইয়াহুদী বা খ্রিস্টান বা অগ্নিপূজারী রূপে গড়ে তোলে। যেমন, চতুষ্পদ পশু নিখুঁত বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাদের মধ্যে কোন কানকাটা দেখতে পাও? (বরং মানুষেরাই তার নাক কান কেটে দিয়ে বা ছিদ্র করে তাকে বিকৃত করে থাকে। অনুরূপ ইসলামের ফিতরাতে ভূমিষ্ট সন্তানকে মা-বাপ তাদের শিক্ষা-দীক্ষা ও জীবন ধারায় প্রবাহিত করে ভ্রান্ত ধর্মী বানিয়ে ফেলে) পরে আবূ হুরায়রা (রাঃ) তিলাওয়াত করলেন ‏فِطْرَةَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا‏ আল্লাহর দেওয়া ফিতরাতের অনুসরণ কর যে ফিতরাতের উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন। (সূরা রূম: ৩০)"(1)
তাই তার অস্তিত্বের নির্দশন খুঁজতে হবে না কোনো ইলেক্ট্রন মাইক্রোস্কপের নিচে বা হতে হবে না কোনো বড় মাপের বিজ্ঞানী বা দার্শনিক বা এর জন্য কোনো PHD Degree 'র    দরকার নেই। কারণ সেই তা জন্মগতভাবে তা লাভ করে থাকে।
এখন দেখা যাক, আধুনিক বৈজ্ঞানিক গবেষণাতে এর সমর্থনে পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ আছে কিনা? অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেভলোপমেন্টাল সাইকোলজিস্ট ড. জাস্টিন এল. ব্যারেট শিশুদের উপর গবেষণা করেন। এ ব্যাপারে বেশ কিছু বইও লিখেছেন তিনি। বইগুলোর মাঝে একটি হল “বর্ন বিলিভার্‌স”, যেখানে তিনি সুস্পষ্ট ভাষায় উল্লেখ করেছেন, “… শিশুরা জন্মগতভাবে বিশ্বাসী, যাকে আমি বলি ‘সহজাত ধর্ম’ …” (2)
অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী (নাস্তিক) ড. অলিভেরা প্যাট্রোভিচ Peer Reviewed জার্নালে তাঁর গবেষণার ফল জানান,
“কিছু ধর্মীয় বিশ্বাস যে সার্বজনীন হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে (যেমন কোন বিমূর্ত সত্তাকে বিশ্বজগতের স্রষ্টা হিসেবে মৌলিক বিশ্বাস), এর (স্বপক্ষে) শক্তিশালী প্রমাণ ধর্মগ্রন্থের বাণীর চেয়ে বরং (বৈজ্ঞানিক) গবেষণা থেকেই বেশি বেরিয়ে আসছে বলে প্রতীয়মান হচ্ছে।” (3)
ইনি হলেন একজন বিজ্ঞানী। তিনি নিজের বৈজ্ঞানিক গবেষণার ফলাফল দিয়ে প্রমাণ দেখিয়েছেন যে, মানুষ সহজাত ও স্বতঃস্ফূর্তভাবে অদ্বিতীয়-সর্বোচ্চ এক বুদ্ধিমত্তায় বিশ্বাস গড়ে তোলে। তিনি আরো বলেছেন যে, ধর্মীয় গ্রন্থের চেয়ে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষালব্ধ প্রমাণ দ্বারাই তা শক্তিশালীভাবে সমর্থিত হচ্ছে। কিন্তু তিনি যদি ইসলামি ধর্মমত অধ্যয়ন করতেন তবে অবশ্যই জানতে পারতেন যে, ফিতরাহ্‌-এর এই ধারণা তথা আল্লাহ্‌র অস্তিত্বের প্রতি সহজাত বিশ্বাস ইসলামের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। ইসলামি গ্রন্থগুলোর পাতার পর পাতা জুড়ে এর উপস্থিতি। একে অস্বীকার করার কোনই উপায় নেই। এর শেকড় ইসলামি ধর্মমতে প্রোথিত। এদিকে ইয়েল ইউনিভার্সিটির আরেক (নাস্তিক) গবেষক পল ব্লুম Peer Reviewed গবেষণাপত্রে প্রমাণ দেখিয়েছেন ঐশ্বরিক সত্ত্বার পাশাপাশি মানুষের যে মন বলে কিছুর অস্তিত্ব আছে এ ধারণাও সহজাতভাবেই শিশুদের মাঝে উদ্ভূত হয়। (4)
সাম্প্রতিক কালে আরো অনেক সেক্যুলার গবেষকদের গবেষণায় প্রতীয়মান হচ্ছে, ধর্মবিশ্বাস প্রাথমিকভাবে ব্যক্তির ভেতর থেকেই উৎপত্তি হয়… যা মৌলিকভাবে মানব মনের এক অংশ…। (5) তাদের সংগৃহীত তথ্য থেকে নতুন তত্ত্ব বেরিয়ে আসছে। যার মধ্যে উল্লেখযোগ্য একটি তত্ত্ব হল, Strong Naturalness Theory যা পূর্বের প্রভাবশালী Anthropomorphism Theory কে ছুঁড়ে ফেলেছে। Strong Naturalness Theory এর বক্তব্য হল, ধর্মবিশ্বাসের উদ্ভব স্বয়ংক্রিয় ও অভ্যন্তরীণ এবং তা প্রকৃতপক্ষে স্বত:স্ফূর্তভাবে শিশুদের মাঝে উদ্ভূত হয়…। (6)
কথা এখানেই শেষ নয়। এইতো কিছু দিন আগেই প্রায় দুই মিলিয়ন পাউন্ড ব্যয়ে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’জন গবেষকের নেতৃত্বে পরিচালিত তিন বছরব্যাপী এক আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রকল্পে ৫৭ জন গবেষক ২০টি দেশে ৪০টি ভিন্ন ভিন্ন গবেষণা পরিচালনা করেন। তাঁদের এই গবেষণার উদ্দেশ্য ছিল স্রষ্টা ও পরকালের ধারণা কি পিতামাতা বা সমাজ কর্তৃক চাপিয়ে দেওয়ার ফল নাকি মানব প্রকৃতির মৌলিক অভিব্যক্তি তা খুঁজে বের করা। দীর্ঘ গবেষণার পর তাঁরা সিদ্ধান্তে উপনীত হন, স্রষ্টার পাশাপাশি মৃত্যু পরবর্তী জীবনে বিশ্বাসও মানুষের সহজাত প্রবণতার অন্তর্গত। (7)
তাহলে আমরা কী বুঝলাম? এখন পর্যন্ত আমার বক্তব্যের সারমর্ম হচ্ছে, আমাদের আল্লাহ্‌র অস্তিত্বে বিশ্বাস করার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হল এই বিশ্বাস ফিতরাহ্‌-এর অংশ, এই বিশ্বাস সহজাত-প্রাকৃতিক। বিশ্বজগতকে প্রকৃতই অস্তিত্বশীল বলে বিশ্বাস করা যেমন যৌক্তিক, আল্লাহর অস্তিত্বে আমাদের এই বিশ্বাসও সম্পূর্ণ যৌক্তিক।

রেফারেন্স:
(1) বুখারী, আস-সহীহ, জানাযা অধ্যায়; খণ্ড ০২, হাদীছ ১২৭৫-১২৭৬ (ঢাকা, ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ, ৫ম সংস্করণ এপ্রিল ২০০৪)
(2) Dr. Justine L. Barrett, Born Believers: The Science of Children’s Religious Belief; p. 136 (Simon and Schuster, Mar 20, 2012)
(3) Olivera Petrovich, Key psychological issues in the study of religion; Psihologija (2007), Volume 40, Issue 3, p. 360; Available at: https://doi.org/10.2298/PSI0703351P
(4) Paul Bloom, Religion is natural (2007), Journal of Developmental Science 10:1, p. 147-151. DOI: 10.1111/j.1467-7687.2007.00577.x
(5) Patrick McNamara Ph.D., Wesley J. Wildman (etd.), Science and the World’s Religions; vol. 02 (Persons and Groups), p. 206, 209 (Publisher ABC-CLIO , July 19, 2012)
(6) প্রাগুক্ত, p. 210; এ বিষয়ে স্বল্প দৈর্ঘ্যের প্রামাণ্য ভিডিও দেখুন: http://callingtotheone com/is-believe-in-god-natural

(7) University of Oxford. “Humans ‘predisposed’ to believe in gods and the afterlife.” ScienceDaily, 14 July 2011. Available at: http://www. sciencedaily.com/releases/2011/07/110714103828.htm

কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

কোরান কি সঠিকভাবে সংরক্ষন করা হয়েছে?

কোরান কি সঠিকভাবে সংরক্ষন করা হয়েছে পর্ব-১ কি যেন বিষয় নিয়ে আলোচনা হচ্ছে। এটা কি আলোচনা নাকি সমালোচনা ঠিক বুঝি উঠতে পারছিলাম না। আমরা উপ...